Menu:

15.05.11

সাংবাদিকতার বিড়ম্বনা বা বিড়ম্বনার সাংবাদিকতা
সাংবাদিকতার বিড়ম্বনা বা বিড়ম্বনার সাংবাদিকতা। যে ভাবেই বলি না কেন, পেশাটি প্রতিমুহুর্তে বিড়ম্বিত। অন্য পেশায় যে বিড়ম্বনা নেই তা নয়। তবে আমাদের বেশি বেশি। পৃথিবীর অন্য দেশে সংবাদ সাংস্কৃতিতে কী আছে তা বলতে পরবো না। কিন্তু আমাদের যত বিড়ম্বনা বা বিব্রত বোধ তা আমাদের দেশের সংবাদ সাংস্কৃতির কারনেই। আমরা চাইলেই এর অনেকটাই এড়াতে পারি।
সাংবাদিকদের মূল বিড়ম্বনা সাংবাদিতাকে কারো স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টার মধ্যে। ইদানিং আমাদের দেশের বেশিরভাগ গণমাধ্যমের মালিকানা চলে গেছে শতভাগ ব্যবসায়ীদের কাছে। গণমাধ্যম নিয়ে সমাজ সংস্কারে যারা এসেছিলেন তাদের বেশিরভাগ এখন অনুপস্থিত। সে মানষিকতাও প্রায় বিলুপ্ত। বিশেষ করে মালিকপক্ষের মধ্য থেকে।  এখন গণমাধ্যম ব্যবহৃত হয় ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষায়।  সরকারগুলোও চেষ্টা করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করার।
পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু সাংবাদিকরা বিব্রত হন তখন, যখন মালিকপক্ষের সেই অপচেষ্টায় তাকেও সামিল করা হয়। গণমাধ্যমে প্রায়ই সত্যের সঙ্গা বদলে যায়। মালিকপক্ষের কাছে যেটা সত্য সেটাই বলতে বাধ্য করা হয় সাংবাদিককে। আসলে কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে সেটা দেখার কোন কর্তৃপক্ষ নেই আমাদের দেশে। যদি থাকেও কার্যকর নয়।
গণমাধ্যম পরিচালনার স্বচ্ছ কোন নীতীমালা নেই। স্বচ্ছ বললাম এই কারণে যে নীতি মালা নামের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো বিতর্কিত।  কারণ একই ্িবষয়ের নিয়ম।  কোন গণমাধ্যমের আচরণ পছন্দ না হলে যে নিয়মে সরকারের সুবিধা হয় সেই নিয়মে শাস্তি দেয়া হয়। এখানে উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, একুশে টেলিভিশন যে নিয়ম না মানার কারণে বন্ধ করা হয়েছিল সেই নিয়ম মানায় বন্ধ করা হয় যমুনা টেলিভিশন। যখন যে ভাবে সুবিধা। আসলে নিয়মের এই অসচ্ছতার সুযোগ নেয় সরকার। আর চাকরি হারিয়ে পরিবারে, সমাজে বিব্রত হন সাংবাদিকরা
গণমাধ্যম পরিচালনাকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু কিছু আচরণও ব্রিব্রত করে কাউকে কাউকে। যেমন রাস্তায় বের হলেই দেখা যাবে বাংলায় অথবা ইংরেজিতে গণমাধ্যমের সিলমারা যান বাহন। আমি বলছি না এর কোনটিই সাংবাদিক অথবা সাংবাদিকতার কাজ বহন করছে না। করছে। কিন্তু বেশিরভাগই সিল সর্বস্ব। গণমাধ্যমের সিল গাড়িতে মেরে নানান সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। এই কাজটি সবচেয়ে বেশি করে রাজধানীর একটি পুরোনো টিভি চ্যনেল। রাস্তায় দাড়ালে প্রতি ১০ মিনিটে ওই চ্যনেলের ১টা গাড়ি অন্তত চোখে পড়বে। অথচ তাদের নিউজ রুমের কথা আমি জানি। প্রতিদিনের সংবাদ কাভার করার জন্যে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হিমসিম খান দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
ইদানিং দেখি একটি কুরিযার সার্ভিসের গাড়ির সামনেও একটি চ্যানেলের সিল মারা থাকে। কী লাভ এই সিল মেরেআমি ঠিক জানিনা। ওইসব গণ মাধ্যমের কর্তা ব্যক্তিদের অনুমতি নিয়ে এই গাড়িগুলো চলে আমি এমনটা বলতে চাই না।
তবে যেহেতু এই ঘটনাগুলো দিনের পর দিন সেহেতু বিষয়টি তাদের নজরে আসা উচিত ছিল। কারণ এটা তাদেরকে বিব্রত না করলেও একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসাবে আমাকে করে।
এবার  আসি আত্ম সমালোচনায়। গণআধ্যমের মিথ্যাচারে আসলে বিব্রত হতে হয় কথনো কথনো। বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলোর ইদানিংকালের মিথ্যাচার চোখে পড়ার মত। অবশ্য সবাই যে করছে তা নয়। কেউ কেউ করছে। যে কোন নির্বাচনে এই বিষয়টি খুব চোখে পড়ে।
দেখা গেছে বেলা ১২টার সংবাদে পাঠক বলছেনচট্টগ্রামে আছেন আমাদের রিপোর্টার ওমুকআমরা এখন সরাসরি তার সাথে কথা বলছি সরাসরি ক্যমেরা চলে গেলো একটি নির্বাচন কেন্দ্রে। টেলিভিশনের পর্দায় লেখা সরাসরি। রিপোর্টার বলার সময় বলছেন এখন বেলা ১২টা এখন পর্যন্ত এই কেন্দ্রে এই অবস্থাএই পর্যন্ত কোন চুরি ধরা পড়লো না। বিপত্তি ঘটলো তখনি যখন রিপোর্টার সাক্ষাতকার নিতে গেলেন নির্বাচন কর্মকর্তার। ওই কর্মকর্তা বললেনএখন সকাল ১০টা এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে কোন ঝামেলা হয়নি। মূল ঘটনাটি হচ্ছে রিপোর্টার ওই দৃশ্যটি সকাল ১০ টায় ধরেছেন। একটি ইমেইলে অফিসে পাঠিয়েছেন। অসাবধানতা বসত কর্মকর্তার মুখে সত্য কথাটি থেকে গেছে। যেটা মোটেও সরাসরি নয়। সরাসরি  বলে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ সংবাটিতে যদি বলা হতোকিছুক্ষণ আগে আমাদের রিপোর্টার ওমুক ভোট কেন্দ্রে ছিলেন। সেখানকার ধরা ছবি এখন আপনাদের দেখানো হচ্ছেতাতে কী কোন ক্ষতি হতো ?
এরকম বহু অপ্রয়োজনীয় মিথ্যাচার করেন সাংবাদিকরা। যেটা সাধারণ দর্শক হয়তো সব সময ধরতে পারেন না। কিন্তু যারা এই মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত তারা বুঝতে পারেন এবং মনে মনে ঠিকই বিব্রত হন কারণ এই মিথ্যাচার না করলে এমন কোন ক্ষতি হতো না।
আমাদের সাংবাদিকদের কারো কারো ব্যক্তিগত আচরণও অনেক সময় বিব্রত করে কাউকে কাউকে। বেশিরভাগ অনুষ্ঠান অথবা সংবাদ সম্মেলনগুলোতে ঘটে ঘটনা গুলো।  প্রথম ঝামেলাটা শুরু হয় বসার যায়গা নিয়ে কে কার আগে কত সামনে বসবে সেটা নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখা গেলো একজন সিনিয়র সাংবাদিক বসারই যায়গা পেলেন না। আর ফকিরের পুলের দেয়াল পত্রিকার বাচ্চা ছেলেটা পায়ের ওপর পা তুলে উল্টা পাল্টা প্রশ্ন করছে। তার পর যদি খাবারের ব্যাবস্থা থাকে সেটা নিয়ে আরেক কাড়াকাড়ি। কে কয় প্যাকেট নেবে সেটা নিয়ে আরেক প্রতিযোগিতা। আমি বহু দিন বহু সাংবাদিককে এরকম দৃশ্যে লজ্জায় কুকড়ে যেতে দেখেছি। অবশ্য এক অনুষ্ঠানে এরকম নামধারি সাংবাদিক / জনের বেশি থাকে না। তবে যে কোন বিশ্রিংখলার জন্যে ওই / জনই যথেষ্ট।
আসলে আমাদের দেশের সাংবাদিকতা শুরু হয়েছিল সমাজ সংস্কারের অংশ হিসাবে। এখানে পেশার চেয়ে জনমত গঠনের  গুরুত্ব ছিল বেশি। সাংবাদিতার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন মূলত রাজনীতিকরা। সংবাদ কর্মী হিসাবে রাজনৈতিক দলের কর্মীরাই কাজ করতেন। এমনকী কাগজ বিক্রির দায়িত্বও নিতেন দলীয় কর্মীরা।
আমাদের সে ঐতিহ্য  অবশ্যই গৌরবমাখা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সংস্কৃতির পরিবর্তন হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে সাংবাদ মাধ্যমের ব্যবহার শুরু হয়েছে। অর্থও আসতে শুরু করেছে এই খাতে। যে কারণে বেড়েছে  সাংবাদ মাধ্যমে কাজের পরিধি। সংখ্যাও বেড়েছে। এখন শুধু সংবাদ পত্র নয় সাংবাদিকতা হচ্ছে টেলিভিশন, রেডিও মাধ্যমেও। বহু ছেলে মেয়ে কাজ করছে এখানে। এব্যপারে রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু হয়েছে আরো বছর বিশেক আগে থেকে। তার পরেও বিড়ম্বনা যাচ্ছে না।
এত কিছুর পরেও আমরা সাংবাদিক। সাংবাদিক হিসাবে শুধু যে বিব্রত হই তা নয়। অনেক আত্মতৃপ্তিও আছে সবপেশার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েই বলছি এই তৃপ্তি অনেক পেশার মানুষের থকে না। আমি আজ যে কাজটি করছি তার ফলা ফল খুবই তাক্ষণিক। ধরা যাক একজন সাংবাদিক একটি রাস্তা সংস্কার নিয়ে রিপোর্ট করলেন। মাসের মধ্যেই ওই রাস্তার কাজ শুরু হলো। আবার একটি অপরাধ চক্রের কার্যক্রম নিয়ে রিপোর্ট করলো। পরদিনই তারা সদলবলে গ্রেফতার হলো। সব ক্ষেত্রেই যে লিখে কাজ হয় তা বলছি না। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ সাংবাদিকের আয় সীমিত। খুব সাধারণ জীবন যাপন তাদের। অথচ দিনভর কাজ করতে হয় সব শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে। এর মধ্যে উচ্চ  ধনি শ্রেণী যেমন আছেন তেমনি আছেন শ্রমিক শ্রেণীও। সবার সাথে যতটা সম্ভব ভাল সম্পর্ক রাখতে হয় পেশার কারণে। যে কারণে এক ধরনের ভালবাসা, শ্রদ্ধা, স্নেহের মত কিছু অদৃশ্য সম্পদ পাওয়া যায় অঢেল।  তাই হাজারো অতৃপ্তির মধ্যে এই প্রাপ্তিটুকু অন্তত আছে। যদি লোভের কথা বলেন আমার এই লোভ আছে এবং লোভটা থাকুক আমি চাই





m¤úv`K: kvgmyj nK `yiivbx|
 m¤úv`K KZ©„K 2, Avi ‡K wgkb †ivW, XvKv- 1203 †_‡K cÖKvwkZ Ges †d«Ûm †cÖm GÛ cvewj‡KkmÝ 11, beve  Ave`yj MwY ÷ªxU , XvKv- 1203 †_‡K gyw`ªZ | mvwe©K †hvMv‡hvM: 01552367580, 01911008469 
E-mail: [email protected]
web: www.dailynawroj.com